আজ সোমবার, ১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিরাপত্তা সেফটি কোড মানছে না শ্রমিকরা লাশ ধামা চাপা দিতে চায় প্রভাবশালীরা!

অপরাধ প্রতিবেদক:
বিল্ডিং নির্মাণ ও দেশের বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে সেফটি ব্যবহার না করায় দূর্ঘটনা ও প্রাণ হানির ঘটনা বাড়ছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা না মেনে চলছে বিল্ডিং নির্মাণ ও দেশের বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। এসকল কাজে কোন প্রকার সেফটি না থাকায় একের পর এক শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটছে। নির্মাণ কাজে সেফটি কোড মেনে চলার বিধান গুলো শুধু কাগজে কলমেই আছে, বাস্তবে এসব মেনে চলে না শ্রমিক ও কর্মরত ব্যাক্তিরা।

নিরাপত্তার বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছে না। সেফটি রের্কড বুক মেইন্টেন করা এবং প্রতি সপ্তাহে রেকর্ডবুক পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের কোন প্রক্রিয়া চালু নেই। নির্মাণ শ্রমিকরা সেফটি বেল্ট ও জুতা ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করছেন। সেফটি জুতার বদলে ব্যবহার করছে স্যান্ডেল, সেফটি বেল্টের বদলে কিছু নেই তাঁদের। নিরাপত্তার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না শ্রমিক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো। তাছাড়া শ্রমিকদের দায়িত্বে থাকা ফোরম্যানরা নজরদারি না করায় এ সকল ঘটনা বাড়ছে।

প্রতিটি বড় প্রকল্পেই হেলথ এবং সিকিউরিটি ম্যানুয়াল থাকে। চুক্তিপত্রে লেখা থাকে, প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং আশপাশের লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়। সরকারের নির্ধারিত কতৃপক্ষের মাধ্যমে বলা আছে, বিল্ডিং কোডের সেফটির জন্য কী করতে হবে। কিন্তু সরকারের নিষেধাজ্ঞা না মেনে চলছে বিল্ডিং নির্মাণ ও দেশের বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। বিল্ডিং নির্মাণ ও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো ঠিকাদাররাও মানে না। কাজে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে বাধ্য করেনা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা গুলো।

কর্মরত শ্রমিকরা জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সেফটি কোড ব্যবহার করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো তেমন বাধ্যবাধকতা রাখেন না। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নজরদারি বাড়ানো হলে দূর্ঘটনা কমানো সম্ভব বলে মনে করেন অনেক শ্রমিক। তবে যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আতংক নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। বিভিন্ন স্থানে একের পর এক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি বিল্ডিং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশের বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ পরিচালনাকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো। শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিলম্ব হওয়া প্রতিষ্ঠান গুলো সচেতন হলে শ্রমিকের প্রাণ রক্ষা পাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন বিল্ডিং এর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, কর্মরত শ্রমিকরা কোন প্রকার সেফটি কোড ব্যবহার না করে স্বাভাবিক ভাবে কাজ করছে। উঁচু বিল্ডিংসহ বিভিন্ন ঝুঁিকপূর্ণ কাজে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কাজ করছে কর্মরত শ্রমিকরা। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে কোন সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে না শ্রমিকদের। দেশের বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজেও যে সকল শ্রমিকরা কাজ করে তাঁদের কাউকে কোন সেফটি কোড ব্যবহার করতে দেখা যায়না। কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা উচুঁ স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় কোন সেফটি ব্যবহার না করে কাজ করে যাচ্ছে।
খানপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, খানপুর এলাকায় অনেক বিল্ডিং নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু শ্রমিকরা বিল্ডিং নির্মাণের সময় মৃত্যু ঝুঁকি হাতে নিয়ে কাজ করছে। আর দূর্ঘটনা ঘটলে প্রভাবশালীরা ও সকলে মিলে ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করে।

কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা হাসান মাহমুদ জানায়, রূপায়ন বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করার সময় উপর থেকে পরে একজন শ্রমিক মারা গিয়েছিলো শুনে অনেক লোক এসেছিলো কিন্তু কাউকে ভিতরে ঢুকতে বা লাশ দেখতে দেয়া হয়নি। কাজের নিরাপত্তা না থাকায় উচুঁ স্থান থেকে পরে অনেকেই মারা যাচ্ছে।

এছাড়া ভূলতা এলাকার বাসিন্দা মীর শফিক বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ হচ্ছে দ্রুত গতিতে কিন্তু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। এদের কি জীবনের মায়া নেই?

অপর দিকে ঢাকার মহাখালী এলাকার ইমরান মেহেদী জানায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে কিন্ত নির্মাণ কাজ করছে যারা, সেই শ্রমিকরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করছেন। কতৃপক্ষের টনকও নড়ে না। এদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

প্রতিবছর বিভিন্ন স্থানে সেফটি না থাকায় প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। কয়েকদিক আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে সচেতনতা না থাকায় শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত শ্রমিক বিপ্লব (২৩) উপর থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই সে মারা যায়।
৮ আগষ্ট ২০১৭ মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরী এলাকায় নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পড়ে রাজা নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর নিহতের ভাই সুজন বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছিলেন। অপর দিকে ৬ ফেব্রুয়ারি পাগলা শান্তিনিবাস এলাকায় অবস্থিত নাছিমা বেগমের নির্মাণাধীন বাড়ীতে পাইলিং মেশিনের কাজ করার সময় এক নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছে। ১৫ মার্চ নগরীর চাষাড়া এলাকায় রূপায়ন টাওয়ারে নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে পরে এক পরিচ্ছন্ন কর্মীর মৃত্যু হয়। এছাড়া ২ অক্টোবর বন্দরের নির্মাণাধীন একটি ভবনে কাজ করতে গিয়ে ৩ শ্রমিক পরে গিয়ে গুরুতর আহত হয় এবং ১৮ জুন ফতুল্লার বিসিক এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কাজ করার সময় পাইলিংয়ের ক্রেন ছিটকে পরে এক শ্রমিক নিহত হয়েছিলো।